ল্যাংস্টোন হিউজ (১৯০২ - ১৯৬৭)
লেখকের জীবনী
কবি ল্যাংস্টোন হিউজ ১৯০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের জপলিন নামক স্খানে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পুরো নাম জেমস্ মার্সার ল্যাংস্টোন হিউজ (James Mercer Langston Hughes)৷ তার পিতার নাম জেমস্ নাতানিয়েল হিউজ (James Nathaniel Hughes) ও মাতার নাম ক্যারি মার্সার ল্যাংস্টোন (Carrie Mercer Langston)৷ তিনি তার পিতামাতার একমাত্র সন্তান৷ কবি হিউজের বাল্যকালেই তার পিতামাতার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে এবং তার পিতা মেক্সিকো তে চলে যান৷ তার মা কাজের সন্ধানে বেরিয়ে যেতেন ও প্রায় সময়েই বাড়িতে থাকতেন না৷ তাই কবির বয়স ১২ বছর হওয়া পর্যন্ত তার নানিই তার দেখা শোনা করতেন৷ তার শৈশব কাটে একাকিত্বে এবং তিনি প্রায় সময়েই বইয়ের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন৷ তার নানি খুব ভালো গল্প বলতে পারতেন এবং তিনিই কবির অন্তরে সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছিলেন৷ তিনিই তাকে বুঝিয়েছিলেন শিক্ষিত হবার প্রয়োজনীয়তা৷
১৯১৪ সালে ১২ বছর বয়সে কবি ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যের লিঙ্কনে চলে গেলেন তার মা ও তার নতুন স্বামীর সাথে থাকতে৷ এখানেই তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন৷ তিনি অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যায়নকালেই তার প্রথম কবিতা লিখেন৷ এক বছর পর তারা ওহিও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে চলে গেলেন৷ বার বার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বসতি স্থাপন করা সত্ত্বেও কবি একজন ভালো ছাত্র হিসেবে বেড়ে ওঠেন এবং পড়ালেখায় ভালো করেন৷ তিনি ক্লিভল্যান্ডের সেন্ট্রাল হাই স্কুলে জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং শ্রেণীর কবি ও স্কুলের বাৎসরিক প্রকাশিত বইয়ের সম্পাদক নিযুক্ত হোন৷
হাই স্কুল শেষে কবি মেক্সিকো, ইউরোপ ও আফ্রিকা ভ্রমণ করেন৷ তিনি কখনও কখনও মাল বহনের কাজও করেছেন৷ তিনি ১৯২৪ সালে আমেরিকায় ফিরত আসেন৷ ইতিমধ্যে তিনি প্রতিভাবান যুবক কবি হিসাবে আফ্রিকান-আমেরিকান সাহিত্যিক সমাজে পরিচিতি লাভ করেন৷ এরপর তিনি নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের হারলেম নামক স্থানে বসবাস করতে শুরু করেন এবং হারলেম রেঁনেসা চলাকালীন সময়ে একজন গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন৷ হারলেম রেঁনেসা ছিল আফ্রিকান-আমেরিকান সাংস্কৃতিক আন্দোলন যার মূল লক্ষ্য ছিল সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, শিল্প ও রাজনীতি৷ ক্লাবে বসে কবিতা লিখতে লিখতে ব্লুস (Blues) গান শোনা ছিল কবির শখের কাজগুলির মধ্যে একটি৷
কবির প্রাথমিক অনুপ্রেরণা ছিলেন ওয়াল্ট হউইটম্যান (Walt Whitman), কার্ল স্যান্ডবার্গ (Carl Sandburg)৷ কালো কবিদের মধ্যে ছিলেন পল লরেন্স (Paul Laurence), যিনি শুদ্ধ ও আঞ্চলিক উভয় ভাষায় সমান ভাবে পারদরশী ছিলেন৷ আরোও ছিলেন ক্লড ম্যাককে (Claude McKay), একজন মৌলবাদী সামাজকর্মী যিনি গীতি কবিতায় পারদর্শী ছিলেন৷ কবি কার্ল স্যান্ডবার্গকে নিজের দিক নির্দেশক তারা ভাবতেন এবং স্যান্ডবার্গ্ই তাকে মুক্ত ছন্দ (free verse) এর দিকে চালিত করেন এবং কবিকে আধুনিক মৌলবাদী গণতন্ত্রের দিকে পরিচালিত করেন৷
ল্যাংস্টোন হিউজ ১৯২৬ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লেখালেখি করেন৷ এসময় তিনি ৬০টিরও বেশি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন যার মধ্যে রয়েছে কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, শিশুতোষ কবিতা, সঙ্গীত, অপেরা ও আত্মজীবনী৷
হিউজ ১৯৬৭ সালের ২২শে মে নিউ ইয়র্কে মৃত্যূবরণ করেন৷
২০০২ সালে কবি ল্যাংস্টোন হিউজের সম্মানে মার্কিন ডাক বিভাগ একটি স্মারক ডাকটিকেট ছাপায়৷ ডাকটিকেটটি ছিল কালো ঐতিহ্য সিরিজ (Black Heritage Series) এর ২৫তম এবং হিউজের ১০০তম জন্মবার্ষিকি উপলক্ষ্যে৷
উল্লেখযোগ্য কর্ম
ল্যাংস্টোন হিউজ ১৯২৬ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লেখালেখি করেন৷ এসময় তিনি ৬০টিরও বেশি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন যার মধ্যে রয়েছে কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, শিশুতোষ কবিতা, সঙ্গীত, অপেরা ও আত্মজীবনী৷
হিউজ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় তার প্রথম কবিতা দ্যা নিগ্রো স্পিকস্ অফ রিভারস্ (The Negro Speaks of Rivers) রচনা করেন৷
কালোদের সঙ্গীতের প্রতি তিনি নিবেিদত হবার কারণে তার প্রথম দুটি বই, ১৯২৬ সালে রচিতদ্যা ওয়েরি ব্লুস (The Weary Blues) ও ১৯২৭ সালে রচিত ফাইন ক্লথস্ টু দ্যা জিউ (Fine Clothes to the Jew) তে জ্যাজ ও ব্লুসের সাথে গতানুগতিক ছন্দকৌশলের অপুর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছে৷
১৯৩০ সালে তিনি তার প্রথম উপন্যাস নট উইদআউট লাফটার (Not Without Laughter) প্রকাশ করেন৷ এর বিষয়বস্তু হলো একজন সংবেদনশীল, কালো, মধ্য-পাশ্চাত্য বালক ও তার সংগ্রামী পরিবার৷ এটি দ্যা ওয়েজ অফ হোয়াইট ফোকস্ (The Ways of White Folks) ছোটগল্পের সংকলন যা ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত হয়৷
তার প্রথম নাটক মুলেটো (Mulatto) ১৯৩৫ সালে ব্রডওয়ে তে উন্মোচিত হয়৷ হিউজ অন্যান্য মাটকও লিখেছিলেন যেমনঃ ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হাস্যরসাত্বক লিটিল হ্যাম (Little Ham) ও ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হওয়া ঐতিহাসিক নাটক এমপেরর অফ হাইতি (Emperor of Haiti)৷ ১৯৩৮ সালে তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর নির্মিত নাটক, ডন্ট ইউ ওয়ান্টটু বি ফ্রি? (Don't You Want to Be Free?) হারলেম স্যুটকেস থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়৷
তার আত্মজীবনীর প্রথম খন্ড দ্যা বিগ সী (The Bug Sea) ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয়৷
১৯৪২ সালে শেকস্পিয়ার ইন হারলেম (Shakespeare in Harlem) ও ১৯৪৩ সালে জিম ক্রো'স লাস্ট স্ট্যান্ড (Jim Crow's Last Stand) বর্ণবাদ বৈষম্যের উপর তীব্র আঘাত হানে৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে ফিলডস্ অফ ওয়ান্ডার্স (Field of Wonders) ও ১৯৪৯ সালে ওয়ান-ওয়ে টিকেট (One-way Ticket) নামক দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়৷ ১৯৫১ সালে তার রচিত মনটেজ অফ এ ড্রিম ডিফারড্ (Montage of a Dream Deferred) -এ তিনি নতুন কাব্য রচনাশৈলি দেখিয়েছেন৷
তার আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খন্ড আই ওয়ান্ডার এজ আই ওয়ান্ডার (I Wander as I wonder) ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয়৷
১৯৪৭ সালে সঙ্গীত বিষয়ে তার রচিত স্ট্রিট সীন (Street Scene) অত্যন্ত ব্যপক সাফল্য লাভ করে৷
তার রচিত অন্যন্য কিছু গ্রন্থ হলোঃ ১৯৫৭ সালে সিম্পলি হ্যাভেনলি (Simply Heavenly), ১৯৬৩ সালে রচিত ট্যাম্বারিনস্ টু গ্লোরি (Tambourines to Glory), ১৯৬১ সালে রচিত ব্ল্যাক নেটিভিটি (Black Nativity), ১৯৬৪ সালে রচিত জ্যারিকো-জিম ক্রো (Jericho-Jim Crow), ১৯৩২ সালে রচিত পাপা এন্ড ফিফিনা (Papa and Fifina), ১৯৫৪ সালে রচিত দ্যা সুইট ফ্লাইপেপার অফ লাইফ (The Sweet Flypaper of Life), ১৯৬২ সালে রচিত আস্ক ইওর মামা (Ask Your Mama), ১৯৬৭ সালে রচিত দ্যা প্যান্থার এন্ড দ্যা ল্যাশ (The Panther and the Lash)৷
উপরিলিখিত বইগুলো ছাড়াও তিনি আরোও অনেক বই লিখেছেন৷
দ্যা নিগ্রো স্পিকস্ অফ রিভার্স (The Negro Speaks of Rivers)
সারমর্মঃ কবিতাটিতে বক্তা দাবি করেন যে, তিনি কিছু নদীর কথা জানেন যেগুলো এই পৃথিবীর মতোই পুরোনো৷ সেগুলো হলো- ইউফ্রেটস্ (Euphrates), কঙ্গো (Congo), নীলনদ (Nile) ও মিসিসিপি (Mississippi)৷ এ নদীগুলো পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবেরও পূর্বের৷ বক্তার হৃদয়ও নদীগুলোর মতো গভীর হয়ে উঠেছে৷ তিনি সৃষ্টির শুরুতে ইউফ্রেটস্ নদীতে গোসল করেছেন৷ কঙ্গো নদী বক্তাকে তার পাড়ে ঘুমাতে বলে৷ বক্তা নীলনদের তীরে পিরামিড (Pyramid) গড়ে উঠতে দেখেছেন৷ এবং অ্যাবে লিঙ্কন (Abraham Lincoln, আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট) যখন নিউ অরলিনস্ (New Orleans) যাওয়ার পথে মিসিসিপি নদী পাড়ি দিচ্ছিলেন তখন বক্তা মিসিসিপি নদীর গান শুনতে পান৷ বক্তা দেখেন যে মিসিসিপি নদীর অন্তর যেন সোনালী রুপ ধারণ করেছে৷ তিনি এসব নদীকে জেনেছেন এবং তার হৃদয়ও নদীর মতো গভীর হয়েছে৷
আই, ট্যু, সিং আমেরিকা (I, Too, Sing America)
সারমর্মঃ বক্তা নিজেও আমেরিকার গান গান৷ বক্তা একজন কালো আমেরিকান যিনি সাদা আমেরিকানের বাড়িতে চাকরের কাজ করেন৷ যখন অতিথি আসে বক্তাকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেখানে তার খাবার গ্রহণ করার জন্য৷ বক্তা ভালো খাওয়ার ফলে শক্তিশালী হয়ে গড়ে ওঠেন৷ তিনি আশা করেন যে একদিন তিনি সাদা অতিথিদের সাথে এক টেবিলে বসতে পারবেন৷ বক্তাকে রান্নাঘরে যাওয়রা কথা বলার সাহস কারোও হবেনা৷ বরং অতিথিরা দেখবে যে বক্তা সুন্দর হয়ে উঠেছেন৷ এবং বক্তার প্রতি করা তাদের পূর্বের আচরণ তথা বক্তাকে তাদের সমতূল্য মনে না করার জন্য তারা লজ্জিত হবে৷
দ্যা ওয়্যারি ব্লুস (The Weary Blues)
সারমর্মঃ বক্তা কোন এক রাতে লেনক্স এভিনিউ (Lenox Avenue) -তে একজন নিগ্রোকে ব্লুস (Blues) গান গাইতে শুনেন৷ গায়ক তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় সামনে পেছনে ঢুলে ঢুলে গান গাচ্ছিল৷ ইবোনির মতো কালো হাতগুলো পিয়ানোর হাতির দাঁতের মতো সাদা চাবিগুলো বাজাচ্ছিল এবং সেই পিয়ানো থেকে দুঃখের করুণ সুর সৃষ্টি হচ্ছিল৷ গায়ক পুরোনে এক গ্যাস লাইটের নিচে এক ভাঙ্গা টুলে বসে বোকা গায়কের মতো গান গাচ্ছিল৷ গানটির বিষয়বস্তু ছিল, নিগ্রোর এই পৃথিবীতে কেউনেই, কিছুই নেই৷ সেজন্য সে অত্যন্ত দুঃখী এবং সে চায় সে যেন মরে যায়৷ গায়ক শেষ রাতের দিকে গানটা গাচ্ছিল এবং গানটা গাওয়ার পরে সে একটি পাথর অথবা মরা মানুষের মতো ঘুমিয়ে পড়ল৷
হারলেম (Herlem)
সারমর্মঃ কবি একটি প্রশ্ন রাখেন যে, কালক্ষেপণ করলে একটা স্বপ্নের কি হয়? কবি এর উত্তরও সাথে সাথে দিয়ে দেন৷ কবি মতে এটি কিসমিসের মতো রোদে শুকিয়ে যায়৷ অথবা, ক্ষতের মধ্যে পুঁজ জমার মতো হয়৷ অথবা, মিষ্টির রসের মধ্যে চিনির শক্ত আবরণের মতো হয়৷ অথবা, অনেক ভারী বস্তার মতো হয়৷ কিংবা বোমার মতো বিষ্ফোরিত হয়৷
স্টাডি গাইড থেকে অনুপ্রাণিত...
No comments:
Post a Comment