এমিলি ডিকিনসন (১৮৩০ - ১৮৮৬)
লেখিকার জীবনী
এমিলি ডিকিনসন (Emily Dickinson) ১৮৩০ সালের ১০ই ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের হ্যাম্পশায়ার অঞ্চলের এমহার্স্ট নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার বাবা এডওয়ার্ড ডিকিনসন (Edward Dickinson) ছিলেন একজন সফল আইনজীবি৷ সেইসাথে তিনি ছিলেন কংগ্রেসের একজন সদস্য, কলেজের ট্রাস্টি (তত্ত্বাবধায়ক) এবং চল্লিশ বছর যাবৎ ঐ কলেজের কোষাধ্যক্ষ৷ তিনি ছিলেন একজন কঠোর কর্তৃত্বপরায়ণ নীতির অধিকারী৷ সেসময় রক্ষণশীল এমহার্স্ট অঞ্চলে গির্জাই ছিল কর্তৃত্বের অধিকারী৷ ঐ ছোট রক্ষণশীল অঞ্চলটি ডিকিনসনের অন্তরের সুপ্ত বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দেয়৷
বালিকা এমিলি দক্ষিণ হেডলি ফিমেল সেমিনারি (Hadley Female Seminary) তে অংশগ্রহণ করেন যেখানে তিনি কর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং বড়দিনে উপবাস করা থেকে বিরত থাকেন৷ তিনি পরে বাড়ি ফিরে আসেন এবং নিজেকে বইয়ের মধ্যে সমর্পণ করেন এবং কবিতা লেখায় নিজেকে মনোনিবেশ করেন৷ তিনি বেন নিউটন (Ben Newton) নামক একজন লোকের প্রেমে পড়েন যিনি ছিলেন এমিলির পিতার আইন শিক্ষার্থী এবং যিনি এমিলিদের পরিবারের সাথেই থাকতেন৷ তবে বিভিন্ন কারণে এমিলি তাকে বিয়ে করতে পারেননি৷ পাঁচ বছর পর বেন নিউটন যক্ষা রোগে মারা যান৷
১৮৫৪ সালে ওয়াশিংটন যাওয়ার পথে ফিলাডেলফিয়াতে ডিকিনসনের সাথে রেভারেন্ড চার্লস্ ওয়াডস্ওয়ার্থ (Reverend Charles Wadsworth) -এর দেখা হয়৷ ডিকিনসন তার প্রেমে পড়েন যদিও ওয়াডস্ওয়ার্থ বিবাহিত ছিলন৷ তবে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক বেশিদিন টিকেনি৷ ১৮৬২ সালে ওয়াডস্ওয়ার্থকে ক্যালিফোর্নিয়া যেতে হয়৷ ডিকিনসন তার বাকি জীবন নিঃসঙ্গতায় কাটান৷
তিনি তার এই নিঃসঙ্গ জীবনেই কবিতা লিখতে থাকেন যেসব কবিতায় থাকে তার জীবনের আকাঙ্খা, অনুভূতি, আনন্দ - বেদনার কথা৷ তিনি ১৮৮৬ সালে মারা যান৷
উল্লেখযোগ্য কর্ম
এমিলি ডিকিনসন লেখালেখি শুরু করেন ১৮৫০ সালে৷ ১৮৬০ সালের দিকে তিনি ভাষা ও ছন্দকৌশল (language & prosody), বর্ণিল (vivid) ও শ্লেষাত্বক লেখনী (epigram) অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেন৷ সেই সাথে মৌলিক চতুষ্পদী কাব্যরীতি (quatrains) ও অনুসরণ করেন৷ তার সরল কবিতার বিষয়বস্তু ছিল ভালোবাসা, মৃত্যূ ও প্রকৃতি৷ তার বেশ কয়েকটি চিঠি তার কবিতাগুলোর মতই শৈল্পিক গুণে পরিপূর্ণ৷ তার জীবদ্দশায় তার ১৭৭৫টি কবিতার মধ্যে মাত্র ৭টি প্রকাশিত হয়েছিল৷ তার কবিতাগুলো মরণোত্তর প্রকাশিত হয়েছিল৷ ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হওয়া থমাস এইচ. জনসন (Thomas H. Johnson) কর্তৃক সম্পাদিত তিন খণ্ডের দ্যা পয়েমস্ অব এমিলি ডিকিনসন (The Poems of Emily Dickinson) তার কবিতার চুড়ান্ত সংস্করণ৷
ওয়াইল্ড নাইটস্-ওয়াইল্ড নাইটস্! (Wild nights - Wild nights!)
সারমর্মঃ কবি কাল্পনিক বন্য রাতের কথা বলেছেন৷ কবির মতে তার ভালোবাসার মানুষ যদি তার সাথে থাকেন তাহলে রাতগুলো আনন্দের তথা সেই রাতে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে হবে৷ কবির হৃদয় একটি নিরাপদ বন্দর তথা ভালোবাসার বন্দরে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা আছে৷ তাই কবি ঝড়ো বাতাসকে ভয় করেন না কেননা ঝড়ো বাতাস তার জাহাজের (হৃদয়ের) কোন ক্ষতি সাধণ করতে পারবে না৷ তাছাড়া সমুদ্রে ভ্রমণ করার জন্য তার কোন কম্পাস বা চার্টেরও প্রয়োজন নেই কেননা তার বন্দর বা জাহাজটি সত্যিকারের কোন বন্দর বা জাহাজ নয়৷ কবি ও তার ভালোবাসার মানুষ সমুদ্রে তথা তাদের স্বর্গে বিচরণ করবেন৷ কবি আশা করেন তিনি যদি তার ভালোবাসার মানুষের মনে নোঙ্গর করতে পারতেন তথা তার মনে স্থান পেতেন!
আই ফেলট্ অ্যা ফিউনারেল ইন মাই ব্রেইন (I Felt a Funeral in My Brain)
সারমর্মঃ কবি তার মগজের মধ্যে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান অনুভব করলেন৷ শোকাহতরা এখানে সেখানে বিচরণ করতে লাগলেন৷ তাদের এই অবাধ বিচরণ কবির মনে এতোটাই বিরক্তির উদ্রেক করলো যে কবির মনে হতে লাগলো যে তিনি ক্রমশ অনুভূতিহীন হতে লাগলেন৷ শোকাহত ব্যক্তিরা যখন আসন গ্রহণ করলেন তখন অনবরত ড্রাম বাজার মত শব্দ হতে লাগল৷ সেই বাজনার উপদ্রবে কবি যেন ক্রমেই অসাড় হয়ে পড়ছেন৷ এরপর তিনি তাদেরকে একটি বাক্স (লাশভর্তি কফিন) উঠাতে শুনলেন৷ কফিন তোলার সময় কবি তার মনে তথা মগজে কর্কশ শব্দ অনুভব করলেন৷ যারা কফিনটি তুলেছিলেন তারা সিসার তৈরি বুট জুতা পরেছিলেন৷ সেই বুট জুতার শব্দও কফিনের সেই কর্কশ শব্দের সাথে একাকার হয়ে গেল৷ তখন কবির কাছে মনে হলো মহাশূন্য ও স্বর্গসমূহ যেন একাকার হয়ে গির্জার মহাজাগতিক এক ঘণ্টা ধ্বনির মতো শব্দের সৃষ্টি হয়েছে৷ তারপর কবি নিজেও যেন শোকাহত ব্যক্তিদের নিরব পদচারণার মাঝে মিশে গেলেন৷ তখন তার কাছে মনে হলো যে, তিনি চিন্তাশক্তিও হারিয়েছেন৷ তার বুদ্ধিও ক্রমে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে৷ তিনি যেন ক্রমেই নিম্নাভিমুখী হচ্ছেন৷ নিচে নামতে নামতে তিনি এমন একটি ভিন্ন জগতে প্রবেশ করলেন যেখানে তার পার্থিব জীবণের সকল চিন্তা চেতনা লোপ পেল৷ তিনি বুঝতে পারলেন না যে এর পরে কি ঘটতে পারে৷
আই টেস্ট অ্যা লিকার নেভার ব্র্যুড (I taste a Liquor never brewed)
সারমর্মঃ কবি কল্পনা করেন যে, তিনি মুক্তার তৈরি বড় পেয়ালা হতে এমন একটি লিকার (মদ) -এর স্বাদ গ্রহণ করেছেন যা কখনই তৈরি করা হয়নি৷ এমন ধরণের মদ রাইন (Rhine) নদীর কাছাকাছি কোন পাত্রে পাওয়া যাবেনা৷ কবি বাতাস দ্বারা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত এবং শিশির পান করে তিনি লম্পট (debauchee) ও অসংযত (libertine) হয়ে পড়লেন৷ ফলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কবি অনন্ত গ্রীষ্মেকালে যেন মাতলামি করতে লাগলেন৷ যখন প্রভুরা (landlords) উন্মত্ত মৌমাছিদেরকে ডিজিটালিস (digitalis) গাছের ফুল থেকে সরিয়ে নেন এবং যখন প্রজাপতিরা পান করা শেষ করে তখন কবি তার লিকার পান করতে শুরু যান৷ পরিরা তাদের তুষারমোড়া টুপিকে শূণ্যে ঘোরাতে থাকে এবং যাজকরা জানালার কাছে ছুটে যায় মদ্যপ কবিকে দেখতে যিনি সূর্যের বিপরীতে ঝুঁকে, ল্যাম্প পোস্ট (lamppost) এর বিপরীতে দাড়ানোর মতো করে দাড়িয়ে আছেন৷
স্টাডি গাইড থেকে অনুপ্রাণিত...
No comments:
Post a Comment